অবজারভার

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী (নভেম্বর ২০১৭)

FOYEZ AHMED
প্রথম অংশ
তুই যে বেভাক জিনিসেনর ছবি আঁকস, এই গুলার কি প্রাণ দিতে পারবি? কোনো মাইনষের ছবি আকঁলে সেই মাইনষের প্রাণ দিতে হয়। তুইতো আল্লাহ্‌ না, তাইলে প্রাণ দিবি কিভাবে ?
প্রাণ ওয়ালা কেনো কিছুর ছবি আকঁলে তার প্রাণ দিতে হয় নাকি মা?
হরে মা! প্রাণ দিতে হয়, বিশেষ কইরা মাইনষের ছবি আকঁলে অবশ্যই প্রাণ দিতে হয়।
এটা কেমন করে হবে মা? মানুষতো গাছপালা, পশুপাখি, মানুষ সবকিছুর ছবি আঁকে। তাই বলে কি সবাই এগুলোর প্রাণ দেয়?
সবার কথা আমি জানিনা। আমি আমার কথা জানি, তুই সব সময় আমাকে জ্বালাতন করস। খালি তর্ক করস। জন্ম থেইক্যা আমারে জ্বালাইতাছস। পেটের মইধ্যে যহন ছিলি তহনও কষ্ট দিসছ।

আমি কী করব মা? মানুষের ছবি যে আকঁতে হয়। মনে কর রাস্তার উপর একটি রিকসা চলছে। সেই রিকসার আবশ্যই ড্রাইভারও আছে, এখন যদি আমি চলন্ত রিকসার ছবি আঁকি তাহলে অবশ্যই ঐ ড্রাইভারটির ও ছবি আকঁতে হবে।

তোর যা খুশি হয় তাই কর গিয়া। আমি তোরে আর বাধা দিমুনা। তবে মনে রাহিস কেয়ামতের দিন এইগুলার হিসাব দিতে হইব।
মা তুমি আমার উপর রাগ করছ কেন? তুমি রাগ করলে আমার মনটা খারাপ হয়। নিজেকে খুব একা মনে হয়। আচ্ছা মা কেয়ামত কী?
হ! কেয়ামত কী সেটা জানবা ক্যামনে? তুমিতো নামায-রোজা কিছুই করনা, ধর্ম-কর্ম কিছুই মাননা তাইলে ক্যামনে জানবা কেয়ামত কী? নামায-রোজা কর, ধর্ম-কর্ম মাইনা চল তাইলেই বুঝতি পারবি কেয়ামত কী? আখেরাত কী? আল্লাহ্‌ কে? আল্লাহ্‌ তোরে ক্যান দুনিয়ায় পাঠাইছেন? ক্যামনে পাঠায়ছেন? খালি ছবি আকঁলে হইবনা। ধর্ম- কর্ম ও মানতে হইব।

মায়ের কথাবার্তায় কিছুটা রাগ, কিছুটা আবেগ, কিছুটা শান্তনার ভাব প্রকাশ পায়। ইরি বুঝতে পারে মায়ের এই কৃত্রিম রাগ আসলে স্নেহেরই বহিঃপ্রকাশ, তাই মায়ের সাথে ইরির আর তেমন কথা হয় না। নিঃশব্দে মাথা নিচের দিকে রেখেই নিজের রুমে চলে যায়।

মা মনে মনে চিন্তা করেন হয়ত কিছুটা কাজ হয়েছে। এখন থেকে নামায-রোজা করবে। ধর্ম-কর্ম মানবে, মনে মনে কিছুটা শান্তনা পান ।

কিন্তু না দু-একদিন পর দেখা যায় যেই কি সেই, ইরি নিজের ইচ্ছামত চলছে। ধর্ম-কর্মের ধারে কাছেই নেই, নিজের খেয়াল-খুশিমত চলাফেরা করছে। মা আবার চিন্তায় পড়েন কী করবেন? কীভাবে নামায-রোজার দিকে মন ফেরানো যায়। মেয়ে হয়ে জন্মেছে, স্বামীর বাড়ী যেতে হবে। সেখানে অবশ্যই নামায-রোজা করতে হবে। স্বামীর বাড়ীর মানুষ যদি নাও করে তবুও তাকে করতে হবে। তা না হলে বদনাম হবে। আশেপাশের মহিলারা, আত্মীয়-স্বজনরা বিভিন্ন ধরনের কথা বলবেন, বংশ তোলে কথা বলবেন, বংশ কী, কোন বংশের বাবা, কোন বংশের মা এসব কথা উঠবে। আরো কত কী যে কথাবার্তা উঠবে তার কোনো হিসাব নেই। নতুন কনেদের সামান্য দোষ-ত্রুটিকে বিরাট করে দেখা হয়। তিলকে তাল করা হয়। এটাই বাস্তব । এইসব চিন্তা করতে করতে মায়ের দিন যায়, রাত আসে, রাত যায় আবার দিন আসে, এভাবেই সপ্তাহ মাস বছর কেটে যায়, ইরি বড় হতে থাকে । ওর ছবি আকাঁর হাত ও আরো দক্ষ হয়ে উঠে।

আজ কয়েকদিন থেকে ইরি বিভিন্ন ধরনের স্বপ্ন দেখছে। স্বপ্নগুলো অদ্ভুদ ধরনের, তবে বেশীর ভাগ স্বপ্নই তার নিজের আঁকা ছবি নিয়ে, যেমন, একদিন সে দেখল সে একটা রিকসার ছবি একেঁছিল সেই রিকসার ড্রাইভার সে নিজেই, রিকসা চালিয়ে যাচ্ছে রাস্তার উপর দিয়ে, রিকসায় কোন প্যাসেঞ্জার নেই। রাস্তায় তেমন যানবাহন ও নেই, প্রায় ফাকাঁ রাস্তা, হঠাৎ বড় ধরনের একটা ট্রাক সরসরি সামনে থেকে আসল, সেই ট্রাক ওর উপর দিয়ে গেল, কিন্তু কী আশ্চর্য সে বেচেঁ গেল। তবে রিকসা ভেঙেচুরে একেবারে ধ্বংস হয়ে গেল।

সেদিন ইরি চিৎকার দিয়ে ঘুম থেকে উঠেছিল, পাশের ঘর থেকে ইরির মা দৌড়ে এসেছিলেন তার কাছে। ইরি প্রথমে স্বপ্নের কথা বলতে চায়নি। মায়ের পীড়া-পীড়িতে শেষে সম্পূর্ণ স্বপ্নের ঘটনা বলল, স্বপ্নের বর্ণনা শুনে মা বলেছিলেন নামায-রোজাতো একদমই করসনা, তাই এইরকম আবুল-তাবুল স্বপ্ন দেখতাছস, নামায-রোজা কর তাইলে এই রকম আর হইবনা, সেদিন রাতে ইরির মা ইরির পাশে শুয়েছিলেন, ইরি কয়েকবার না করেছিল আবার ভেতরে ভেতরে ভয় ও পাচ্ছিল তাই আর বেশী জোর করেনি। তবে সেদিন সারারাত মা জেগেছিলেন। ইরি চোখ বুজে ঘুমানোর চেষ্ঠা করেছিল। কিন্তু ঘুম হয়নি।

এর দুদিন পর ইরি আবার স্বপ্ন দেখল, খুব সুন্দর পাল তোলা নৌকায় নদী ভ্রমনে বেরিয়েছে ইরি। নৌকার পালের রং দুধে আলতা, বাতাসের কারনে পালের ঠিক মধ্যে খানে গর্তের মত তৈরী হয়েছে, ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে নৌকা।
ওরা সাতজন, সাতজনই মেয়ে তাদের মধ্যে কারো কারো পূর্বে নৌকা চলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। নৌকা ভ্রমন সবাই খুব উপভোগ করছে। একেক জন একেক রকম অভিজ্ঞতার কথা বলছে। নৌকা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে যখন মাঝ নদীতে পৌছাল ঠিক তখনই হঠাৎ করেই নৌকাটি ঘুরতে শুরু করল। ধীরে ধীরে ঘুরন্ত - সেই নৌকার বেগ বাড়তে থাকল আর সবাই চিৎকার শুরু করল, কিন্তু কি আশ্চর্য ইরির মনে হল সেই চিৎকার বেশী দূর যাচ্ছে না, মনে হচ্ছে যেন নদীর ছোট ছোট ঢেউ-এ সেই চিৎকার মিলিয়ে যাচ্ছে। মাঝি অনেক চেষ্ঠা করে ও নৌকাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেনা। শেষ পর্যন্ত - মাঝিটি সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল- আফামণিরা নৌকাডা এহন তলাইয়া যাইব। আমি কিছুই করবার পারতাছিনা। আফনেরা আল্লাহ্‌র নাম জপ করেন। মাঝির ভয় মিশ্রিত কথাটি শুনে ইরি তার দিকে ভাল করে তাকাল, আর তখনই তার মনে হল মাঝিটি যেন তার চেনা। কোথায় যেন তাকে দেখেছে। হঠাৎ করেই তার মনে পড়ল ওতো সেই ট্রাক ড্রাইভার, যে তাকে চাপা দিয়েছিল। ওকে এক নজর দেখেছিল সে, ট্রাক চাপা দেয়ার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে। মাঝিকে যখন সে চিনতে পারল আরো অবাক হল। কারন এতক্ষণ ধরে রয়েছে নৌকায় কিন্তু একবারের জন্যও ভাল করে দেখেনি মাঝিকে।
বান্ধবীদের মধ্যে থেকে একজন নদীর মধ্যে একটা জিনিসকে লক্ষ্য করে চিৎকার করে বলল ওটা কী? ওর কথা শুনে সবাই সেদিকে তাকাল। সবাই আশ্চর্য হল আর ভয় মিশ্রিত কন্ঠে বলল ওঠা কী? এর চেহারা এরকম কেন?
সবাই দেখল অদ্ভুদ ঐ জিনিসটার মাথা মুখ সবই মানুষের মত ইরি লক্ষ্য করল ঐ প্রাণীর মুখটি হুবহু মাঝির মুখের মত। ইরি কয়েক মুহূর্ত তাকানোর পর মুখ ঘুরিয়ে নৌকার মাঝির দিকে তাকাল। আশ্চর্য নৌকার মাঝি যেখানে বসে দাঁড় চালাচ্ছিল সেখানে সে নেই। ইরির চোখ মাঝিকে খুজঁতে লাগল। কিন্তু নৌকার মধ্যে তাকে দেখতে পেলনা। ইরির চোখ আবার ঐ অদ্ভুদ প্রাণীটার উপর পড়ল। প্রাণীটা ধীরে ধীরে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। ইরির কাছে হঠাৎ মনে হল তাদের নৌকাটি পূর্বের তুলনায় একটু কম ঘুরছে। কিন্তু প্রাণীটি এগিয়ে আসছে, আসছে আর তার ভয়ঙ্কর রূপটা আরো ভেসে উঠছে। ইরিও এবার ভয়ঙ্কর ভাবে চিৎকার শুরু করল সাহায্যের জন্য। কিন্তু ওর মুখ দিয়ে একটা শব্দও বের হচ্ছেনা। বারবার চেষ্ঠা করছে আর বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। ওর মনে হল ওর দম আটকে যাচ্ছে। ঠিকমত শ্বাস নিতে পারছেনা।
ঠিক তখনই অদ্ভূদ গোঙানীর মত শব্দ করে ইরি বিছানায় উঠে বসল। ওর সমস্ত - শরীর ঘেমে কাপড়ের সাথে শরীর লেগে রয়েছে। বিছানার চাদর প্রায় ভিজে গেছে। গলার ভেতর শুকিয়ে এমন অবস্থা হয়েছে যে মনে হচ্ছে এখনই গলার ভেতরের সবকিছু ছিড়ে বেরিয়ে আসবে। ইরি নিরব-নিস্তব্ধ হয়ে কিছুক্ষণ বসে রইল। কিছুটা প্রকৃতস্ত - হওয়ার পর বিছানা থেকে পানির সন্ধানে টেবিলের দিকে এগিয়ে গেল, এক এক করে দুই গ্লাস পানি পান করল। পানি পান করতে এত অল্প সময় ব্যয় করল যে সে নিজেই অবাক হয়ে গেল।

তারপর ফ্যানের স্পীড বাড়িয়ে দিল। কিছুক্ষণ বসার পর তার শীত শীত করতে লাগল। ফ্যান অফ্‌ করে দিল। ফ্যান সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ হওয়ার পর ওর মনে হল অসম্ভব নীরবতা এই ঘরে, এরকম নীরবতা বোধহয় পৃথিবীর আর কোথাও নেই, ইরি জানালা খুলল। আকাশের দিকে তাকাল, আকাশে অসংখ্য তারা জ্বলছে। ফুরফুরে বাতাস তার শরীরে লাগল, অসম্ভব ভাল লাগছে সেই বাতাস, মনে হচ্ছে যেন সকল ক্লান্তি - ধুয়ে মুছে নিয়ে যাচ্ছে। বাইরের পরিবেশটা প্রায় ফর্সা বলা চলে, আকাশ ঝকঝকে, মেঘের বিন্দু মাত্র ও নেই। ইরি মনে করার চেষ্ঠা করল এখন বাংলা কোন মাস চলছে। বাংলা কোন মাসে আকাশ এত পরিষ্কার হয়? বাংলা মাসের নাম সে মনে করতে পারলনা। এবার ইংরেজী মাসের নাম মনে করার চেষ্ঠা করল, তাও পারলনা। নিজের কাছে অদ্ভূদ মনে হল নিজেকে। কারন আজ রাতে ও ঘুমাবার পূর্বে ছোট্ট একটা ছবি একেঁছে সে, যে কাগজে ছবি একেঁছে সেই কাগজের নিচে ডানদিকে তারিখ এবং সময়টা লিখেছে। এটা ইরির অভ্যাস। যেদিন যে ছবি সম্পূর্ণ হবে তার নিচে তারিখ এবং সময় লিখে রাখবে।

ইরির এখন আর কোন কিছু ভাবতে ইচ্ছা করছেনা। রাতের এই সৌন্দর্য আগে কখন ও সে এভাবে দেখেনি। এরকম মুহূর্তগুলো যে পৃথিবী কিভাবে তৈরী করে ভাবতেই অবাক লাগে।

ইরি আর ঘুমোতে পারেনি, ঘুমোনোর চেষ্ঠা করেছে কিন্তু ঘুম আসেনি। ভোর হওয়া পর্যন্ত- জেগে রইল ঘরের মধ্যে পায়চারী করে, জানালার পাশে বসে, বিছানায় আধশোয়া হয়ে আর অতীতের অনেক ঘটনা চিন্তা করে। এরপর হঠাৎ করে আশেপাশের মসজিদগুলো থেকে ফজরের আযানের ধ্বনি ভেসে আসল, ইরি চিন্তা করতে লাগল প্রায় কতদিন পর ভোর বেলায় আযানের ধ্বনি শুনতে পাচ্ছে, অনেকদিন আগে শুনেছিল, মনেই পড়ছেনা ঠিক কত দিন আগে, অদ্ভূদ ভাল লাগা সেই সুর, সেই ধ্বনি।

বাবা যখন বেঁচে ছিলেন তখন ফজরেরর আযানের সাথে সাথে ঘুম থেকে জেগে উঠতেন, তারপর মুখ হাত ধুয়ে অজু করে ফজরের নামায আদায় করতেন, নামায শেষ করে তিনি ইরিকে ঘুম থেকে ডেকে তুলতেন, এরপর তাকে নিয়েই মর্নিং ওয়ার্কে বের হতেন, অনেক দিন বাবা ঘুম থেকে ডেকে তোলার পূর্বেই ঘুম ভেঙে যেত ইরির। তখন বিভিন্ন মসজিদ থেকে ভেসে আসা মোয়াজ্জিনের আযানের সুর শুনতে পেত ইরি। সেই সুর খুব সুন্দর ভাবে নিরবতা আর নিস্তব্ধতাকে ভেঙে এগিয়ে আসত। অনেক সময় তখন দূর থেকে বিভিন্ন পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দ ও ভেসে আসত।

ইরি আরো চিন্তা করতে লাগল সেই নিরবতা ভেঙে আযানের মধুর সুর যখন কানে এসে লাগত তখন সেই আযান শুনার জন্য কান পেতে থাকতাম । কিন্তু আজকাল আর সেই মধুর আযানের ধ্বনি শুনা হয় না। অনেকদিন পর আবার সুমধুর সেই সুর শুনছি। বাবার মৃত্যুর পর কয়েকদিন ভোরবেলা জেগে উঠতাম আর শুনা হত, এরপর থেকে কখন যে হারিয়ে গেছে নিজের কাছ থেকে সেই সুর তার কোন হিসাব নেই, একবার বাবাকে আযানের অর্থ জিজ্ঞেস করেছিলাম, বাবা অর্থ বুঝিয়ে দিয়েছিলেন।

আল্লাহ্‌ সর্বশ্রেষ্ঠ
আল্লাহ্‌ সর্বশ্রেষ্ঠ
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ্‌ ছাড়া কোন উপাস্য নেই
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ্‌ ছাড়া কোন উপাস্য নেই
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহ্‌র রাসূল
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহ্‌র রাসূল
নামাযের জন্য এসো
নামাযের জন্য এসো
কল্যাণের জন্য এসো
কল্যাণের জন্য এসো
আল্লাহ্‌ সর্বশ্রেষ্ঠ
আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ্‌ নাই।

এরপর বলেছিলেন ফযরের নামাজের সময় যে আযান দেয়া হয় সেই আযানে একটি কথা বাড়তি থাকে।
তা হল- আসসালাতু খাইরুম মিনান্‌নার
অর্থ- ঘুম থেকে নামায উত্তম।
আসসালাতু খাইরুম মিনান্‌নার
অর্থ- ঘুম থেকে নামায উত্তম।

এই সময়তো সবাই ঘুমে থাকে সে জন্য এই কথাটা বলা হয়ে থাকে। তাছাড়া মা নামায মুসলমানদের জন্য ফরয, অর্থাৎ অবশ্যই করতে হবে। নামায যদি না আদায় কর তাহলে এর শাস্তি- কেয়ামতের দিন পেতেই হবে, এর কোন ক্ষমা নেই। সুতরাং নামায তোমাকে আদায় করতেই হবে।
আল্লাহ্‌ তা’আলা জ্বীন ও মানব জাতিকে কেন সৃষ্টি করেছেন? উনার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। এই পৃথিবীতে যত ধরনের প্রাণী দেখবি তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ কে জানিস? এই মানব জাতি; সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ প্রাণী হয়ে আমরা কী করি? কিছুই করিনা। আল্লাহ্‌র কথামত চলিনা, তার ইবাদত করিনা, বরং আমরা উল্টা কাজ করি যা আল্লাহ্‌ নিষেধ করে দিয়েছেন।

যেদিন বাবা ধর্ম, নামায, কেয়ামত আল্লাহ্‌ তাআলা সম্পর্কে অনেক কিছু বলেছিলেন, সেই কথাগুলো অসম্ভব গুছানো আর সুন্দর। বাবা সচরাচর এসব কথা বলেন না, সময় এবং পরিবেশ বুঝে বলতেন।

বাবার এই কথাগুলো আজ অতীত, আজ স্মৃতি, আজ বাবা কোথায় আর আমি কোথায়, আজ আর মনে পড়েনা আযান কোন কোন সময় হয়? আযানের অর্থ কী? বাবা সবকিছু শিখিয়ে দিয়েছিলেন। কালের বিবর্তনে আজ সবকিছু হারিয়ে গেছে । বাবার স্মৃতিগুলোও ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। একদিন আমাকেও চলে যেতে হবে। এটাই প্রকৃতির চরম বাস্তবতা ।

প্রকৃতি তার সময়কে খুব সুন্দর সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। সেই সাথে পরিবেশ বদলায়। পরিবেশের সাথে মানুষও বদলায়।

বাইরে একটু ফর্সা হতেই ইরি হাত মুখ ধুয়ে মর্নিং ওয়ার্কে বের হল। অনেক দিন পর এই বের হওয়া। দুপুর বেলার জগতের সাথে এই ভোরবেলার জগতের আকাশ পাতাল পার্থক্য।

কি সুন্দর পরিবেশ! ঠান্ডা হাওয়া। শব্দহীন জগৎ, নিরব পরিবেশ, যানজটহীন রাস্তাঘাট। অদ্ভুদ এক ভাললাগা ঘিরে ধরল ইরিকে। মনে হল এরকম সময় যে পৃথিবীতে তৈরী হয় তা অকল্পনীয়।

অনেকেই মর্নিং ওয়ার্কে বেরিয়েছেন। বাচ্ছা থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত । অনেককে দেখেই বুঝা যাচ্ছে এরা প্রতিদিনই আসেন মর্নি ওয়ার্কে। এদের সবাইকে মনে হচ্ছে খুবই নম্র-ভদ্র । শরীর আর মনের শান্তনার জন্য বেরিয়েছেন। কিন্তু এরাই, এই ভদ্র লোকেরাই আরো দু-তিন ঘন্টা পরে বদলে যাবেন। যার যার কর্মস্থলে বসে ঘুষের চিন্তায় নিমগ্ন হবেন। কাকে কীভাবে ঠকানো যায় এই চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠবেন।

ইরির মনে হল ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের সংখ্যা কম, আর যারা বেরিয়েছে তাদের সাথে অভিভাবকরা রয়েছেন। পথ শিশুর সংখ্যাই বেশী, খুবই সংক্ষিপ্ত এদের কাপড়, দেখেই বুঝা যায় ঘরে খাবার নেই তো কাপড় আসবে কোথা থেকে। ইতিমধ্যে এই পথশিশুরা তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছে, রাস্তায় ফেলে থাকা কাগজ, প্লাষ্টিক বোতল ইত্যাদি কুড়াচ্ছে। এগুলো কুড়ানো নিয়ে তাদের মধ্যে প্রতিযোগীতা হচ্ছে, মনে হচ্ছে যেন এক একটি কাগজ বা বোতল এক একটি মূল্যবান সম্পদ। হ্যা তাদের কাছে এগুলোর মুল্য অনেক বেশী। এক টুকরা কাগজ বা একটা বোতল যদি বেশী হয় তাহলে তাদের আয়ের পরিমাণটা একটু হলেও বাড়বে। এই সামান্য আয় বাড়ানোর জন্যই এত ভোরে ঘুম থেকে ওঠা।

এখনো কোনকিছু তাদের পেটে পড়েনি। কখন পড়বে তার ও কোন ঠিক নেই। হযত দেখা যাবে সারাদিনের মধ্যে একবারও খাবার খাওয়া হয়নি । শুধু পানি পান করেই সারাদিন কাটাতে হয়েছে। কারণ এই জিনিসগুলো কুড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার পর বিক্রি করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় খরিদ দাররা টাকা দিতে দিতে সেই বিকেল হয়ে যায়। কখনও বা প্রতিদিনের টাকা প্রতিদিন পাওয়া যায় না।
এই পথশিশুদের মধ্যে বেশীর ভাগই বেরিয়ে এসেছে পরিবারকে বাচানোর জন্য। এত ছোট বয়স থেকেই পরিবারের হাল ধরতে হয়েছে এদের, এটাই তাদের জীবন, এটাই তাদের নিয়তি।
অদ্ভুদ ভাল লাগা আর অদ্ভুত খারাপ লাগার মধ্যে দিয়ে হেঁটে চলেছে ইরি, কিছুক্ষণ হাঁটার পর তার আর হাঁটতে ভাল লাগলনা, পাখির কিচির মিচির শব্দ, সুন্দর এই সকাল, নিরব এই পরিবেশ এখন ওর আর ভাল লাগছেনা। সুন্দর এই সকাল টাকে মনে হচ্ছে যেন বিষ মাখানো একটি তীর। আর এই তীরটি এখন তাকে আঘাত করছে, যার আঘাতে যে কোন প্রাণীর মৃত্যু হতে পারে।

দ্বিতীয় অংশ
ইরির স্বপ্ন দেখা বেড়ে গেল, প্রতিদিন রাতে সে স্বপ্ন দেখতে শুরু করল, ধীরে ধীরে ইরির এমন অবস্থা হল যে ঘুম আসার আগেই সে স্বপ্ন দেখে, এসব স্বপ্নের মধ্যে কিছু কিছু তার চিন্তার ফসল আর কিছু কিছু স্বপ্ন সত্যিই অদ্ভূদ। আবার কোন কোনটি ভয়ঙ্কর। কোনটি আবার অতি সুন্দর।
স্বপ্ন দেখে যেদিন ইরির ঘুম ভাঙে সেদিন আর তার ঘুম হয়না। রাতজাগা পাখির মত জেগে থাকতে হয়। এভাবে ধীরে ধীরে প্রতিটি রাত ইরির কাছে দূর্বিসহ হয়ে ওঠে। রাতে ঘুমুতে গেলেই অস্বস্তি লাগে। আর এসব কারনে ইরির শরীর দিন দিন খারাপ হতে থাকে, খাওয়ার রুচি কমে যায়। চেহারা মলিন আকার ধারণ করে, স্বাস্থ্যের ভাঙন ধরে। চোখের নীচে কালি পড়ে।

ইরির মা ইরির এই অবস্থা দেখে ইরির অমত থাকা সত্ত্বেও এক রকম জোর করেই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান ।
ডাক্তার ইরিকে ভাল করে পরীক্ষা করার পর কয়েকটি পরীক্ষা করানোর জন্য বললেন। আর বললেন পরীক্ষাগুলোর রিপোর্ট নিয়ে যেন দু’জনেই আসেন।

তিনদিন পর রিপোর্ট নিয়ে ইরি এবং ইরির মা ডাক্তারের কাছে আসলেন।
ডাক্তার রিপোর্টগুলো দেখে ইরিকে কয়েকটি প্রশ্ন করলেন, যেমন-
* তুমি কি কোন চাকরী কর?
* জ্বীনা।
* এখন ও কি পড়াশুনা করছ?
*জ্বী।
* কোন কাজটি খুব মনযোগ সহকারে কর পড়াশুনা নাকি ছবি আকাঁ?
* পড়াশুনাতো অবশ্যই মনযোগ দিয়ে করি, আর ছবি আঁকার সময় যথাসম্ভব চেষ্ঠা করি ছবিটা যেন ভাল হয়।
* গত দিনতো তুমি বলেছিলে প্রায় সময়ই ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখ, এখন ও কি স্বপ্ন দেখ? অর্থাৎ আমি বলতে চাচ্ছি এই দু-একদিন ও কি তুমি স্বপ্ন দেখেছ?
* জ্বী দেখেছি।
* গতকাল রাত্রে যে স্বপ্নটা দেখেছিলে সেটা কি বর্ণনা করতে পারবে?
* জ্বী পারব।
* বলতো শুনি। চেষ্ঠা করবে কোন অংশ যাতে বাদ না পড়ে।

গতকাল দেখেছি ভয়ঙ্কর একটি স্বপ্ন। দেখলাম আমার আঁকা একটি ছবি জীবন্ত হয়ে উঠেছে, সেটা ছিল একটি পাখির ছবি। পাখিটি ধীরে ধীরে বড় হতে শুরু করল, ওর পা, মুখ, ডানা অদ্ভূদ হতে শুরু করল, শুধু অদ্ভূদই না ধীরে ধীরে সেটা হিংস্র ভাব প্রকাশ করতে লাগল। এক সময় সেটি আমাকে ঠোকর দিতে শুরু করল। এক একটি ঠোকর মনে হচ্ছিল যেন আমার শরীরে এক একটা পেরেক হাতুড়ী দিয়ে ঢুকানো হচ্ছে, সেই পাখির রং ছিল অজানা আর অদ্ভূদ রকম বিদঘুটে, আমি ঠিক বুঝাতে পারবনা। আর ............ ডাক্তার ইরিকে থামিয়ে দিলেন, তিনি বললেন আমি একজন ডাক্তারের নাম এবং ঠিকানা লিখে দিচ্ছি, উনাকে আমার প্রেসক্রিপশন দেখাবেন। উনার কাছে ফোন করে আমি তোমার কথা বলে রাখব। সব কাগজ পত্র নিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উনার সাথে যোগাযোগ করবে।

ডাক্তারের কথামত তারা নাম ঠিকানা লিখা কাগজ এবং অন্যান্য সবকিছু নিয়ে বেড়িয়ে গেলেন। ওরা বেরিয়ে যেতেই ডাক্তার সাহেব রিসিভার হাতে নিয়ে সাইকিয়াট্রিস্ট এস লোকমানের কাছে ফোন ঘুরালেন। ওপাশ থেকে ভারী গলার আওয়াজ শুনা গেল। ডাক্তার লোকমানই ফোন ধরেছেন।
* হ্যালো কে বলছেন?
* স্যার আমি লস্কর।
* লস্কর! কী খবর বল?
* স্যার আমি আপনার কাছে ইরি নামের একটি মেয়েকে পাঠিয়েছি। ওর কয়েকটি পরীক্ষা করিয়েছি সেগুলো দেখলেই আপনি বুঝতে পারবেন ও শারীরিক ভাবে সুস্থ , ওর সমস্যা হল স্যার- ও স্বপ্নকে বাস্তবে বে নিয়ে আসতে চাচ্ছে। অর্থাৎ স্বপ্ন জগৎকে সে বাস্তব মনে করছে, অবশ্য সেটা ওর অবচেতন মনই করছে। তবে এভাবে আর কিছু দিন চললে স্যার ও মানষিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলবে, তখন স্যার বাস্তব জগৎটাকে ওর কাছে স্বপ্ন মনে হবে আর স্বপ্নকেই বাস্তব মনে হবে। এখন আপনি দেখুন স্যার কী করা যায়। তাহলে এখন রাখি স্যার?

* হ্যা রাখ।
* তোমার নাম ইরি?
* জ্বী।
* ভাল নাম কী?
* আরিফা ইরিনা।
* কী কর তুমি ?
* পড়াশুনা করছি।
* আর কিছু করছ?
* জ্বীনা । তবে ছবি আঁকি।
* সেটা কতদিন ধরে ?
* ছোট বেলা থেকেই বলতে পারেন।
* তোমার রিপোর্টগুলো ভাল, তেমন কোন সমস্যা নেই।
তোমার বর্তমান যে সমস্যা তা হল- পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম হচ্ছেনা। আর তাতেই তোমার মস্তিস্কের নিউরণগুলো খুব উত্তেজীত হয়ে পড়েছে। নিউরণ উত্তেজীত হওয়ার একটা মাত্রা আছে। সেই মাত্রা পার হলে মানুষ স্বাভাবিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে, অবশ্য আবার ঠিকও হয়ে যায়। তবে যদি সেই মাত্রাটা পার হওয়ার পর যখন কেউ ভারসাম্য হারায় আর সেটা স্থায়ী হতে পারে তাহলেতো আর কথাই নেই, তখন তাকে আমরা মানষিক রোগী বলি, এই মানষিক ভারসাম্য হারানোটা বিভিন্নরকম হতে পারে। তোমার যে সমস্যা সেটা খুবই স্বাভাবিক। বিশ্রামের অভাবে নিউরণগুলো একটু উত্তেজীত হয়েছে এই যা। সুতরাং তুমি এখন সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকবে। কোন ধরনের চিন্তা-ভাবনা করার প্রয়োজন নেই, এমনকি পড়ালে বা ছবি আঁকারও দরকার নেই। শুধু বিশ্রাম আর বিশ্রাম, কোথাও বেড়িয়েও আসতে পার, আমি সামান্য ঔষধ লিখে দিচ্ছি । এগুলো আজ থেকেই খাওয়া শুরু কর। আশাকরি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।

ডাক্তারের কাছ থেকে আসার পর ইরি তিনদিন কোনো স্বপ্ন দেখেনি। চতুর্থদিন স্বপ্নে দেখল অচেনা একজন লোক তাকে বলছে তুমি আমার ছবি আকঁলে কী করে? আমাকেতো তুমি কখন ও দেখনি। ইরি উত্তর দিচ্ছে আপনি কে? আপনার ছবি আকঁব কেন? আপনাকেতো আমি কখনও দেখিনি।
এই কথাগুলো বলার পর ইরি লক্ষ্য করল লোকটির চেহারা পাল্টে যাচ্ছে। আশ্চর্যজনক এক চেহারা ধারণ করছে। সেই চেহারাটা ঠিক কী ধরণের বা কিসের সে বুঝতে পারছেনা। ওর মনে হল পৃথিবীর কোন কিছুর সাথে এই চেহারার মিল নেই। সম্পূর্ণ রূপ ধারণ করার পর লোকটি প্রশ্ন করল- এখন কি চিনতে পারছ?

তুমি আমার এই রূপটাই একেঁছিলে, লোকটির কথা শুনে ইরি স্বপ্নের মাঝে চিন্তা করতে লাগল চার শিৎ ওয়ালা কোন মানুষের ছবি একেঁছে কিনা? শুধু তাই নয় চারটি শিং ত্রিকোণাকার মুখ, সম্পূর্ণ গোলাকার দুটি চোখ, শরীরটা চতুস্কোণ, ইরি স্বপ্নের মধ্যেই মনে মনে বলল- এরকম ছবিতো আমি কোন সময় আঁকিনি।

* ইরি লোকটাকে উত্তর দিল- এরকম ছবি আমি আঁকিনি।
* তুমি অবশ্যই একেঁছো। হয়ত মনে করতে পারছনা।
* এবার ইরি একটু বিরক্তবোধ করল, শুধু যে বিরক্তবোধ করছে তানা এরকম অদ্ভূদ চেহারাকে ভয়ও করছে। তাই সে বিরক্ত আর ভয় মিশ্রিত গলায় বলল- আকঁলে একেঁছি তাতে কি হয়েছে? আপনি কে সেটা বলুন।
* আমি তোমার কল্পনাজগতের বাস্তব একটা রূপ।
* আপনি কী বলছেন আমি বুঝতে পারছিনা।
* তুমি বা তোমরা যেটাকে স্বপ্ন বা কল্পনা মনে কর সেটারও যে একটা বাস্তব জগৎ আছে তা তোমরা জাননা।
* ঠিক বুঝলামনা।
* মনে কর তুমি একজন মানুষের ছবি আকঁলে, এই ছবি পৃথিবীর কোন মানুষ বা প্রাণীর সাথে মিলেনা। যদি পৃথিবীর কোন মানুষের সাথে নাই মিলে তাহলে এটি তোমার মাথায় এল কিভাবে? এর একটাই ব্যাখ্যা। আর সেটা হল বাস্তব স্বপ্ন জগৎ। যেখানে তোমার আকাঁ ঐ ছবির মানুষটি রয়েছে। তবে সে মানুষ নাও হতে পারে। বুদ্ধিহীন বা বুদ্ধিমান কোন প্রাণী ও হতে পারে।
হঠাৎ করেই ইরির ঘুম ভেঙে গেল। কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে রইল। ঠিক বুঝতে পারলনা কী হচ্ছে? এটা স্বপ্ন না বাস্তব? আজ ওর শরীর ঘামেনি, তবে সম্পূর্ণ শরীর বরফের মত ঠান্ডা হয়ে গেছে। ইরি বুঝতে পারছেনা এখন কী করবে? আজ রাতে যে আর ঘুম হবে না এটাও সে ভাল করে জানে, ইরি টেবিল ঘড়ির দিকে তাকাল, সাড়ে তিনটা।
ধীরে ধীরে ইরির উত্তেজনা বাড়তে শুরু করল। ছটফট করতে লাগল সে । উত্তেজীত অবস্থায় অনেক সময় কাটল। প্রায় সাড়ে পাঁচটার দিকে ইরি নিজেকে স্থির মনে করল। বাথরুম থেকে হাত-মুখ ধুয়ে এল। এরপর একটানা দু-গ্লাস পানি পান করে স্থির হয়ে বিছানার উপর বসল। শান্তভাবে চিন্তা করতে লাগল এরকম কারো ছবি একেঁছে কিনা? অনেকক্ষণ চিন্তা করার পর এরকম কারো ছবি আকেঁনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হল।
তাহলে কেন সে এরকম অদ্ভূদ স্বপ্ন দেখল? আর স্বপ্নের ঐ প্রাণীটিই বা কেন বলল ওর ছবি সে একেঁছে? তাহলে কি এই কিম্ভুতকিমাকার মার্কা কোন প্রাণীর কথা চিন্তা করেছিল? আর সেই চিন্তাতাটা মস্তিষ্কের নিউরণ যত্ন সহকারে ধরে রেখেছিল? এখন তা প্রকাশ করছে।

ইরির ক্লান্তি-বোধ হতে লাগল, নিজের অজান্তেই সে বালিশে মাথা ফেলল । অদ্ভূদ সে সব চিন্তা-ভাবনার মধ্যে কখন যে তার ঘুম আসল টেরই পেলনা, গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল সে। ইরির ঘুমন্ত এই মুখ দেখলে মনে হবে নিষ্পাপ একটি শিশু অনেক কান্নাকাটির পর পেট ভরে দুধ খেয়ে এখন শান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছে।
পৃথিবীর কোন কিছুর সাথে তার যোগাযোগ নেই।
যোগাযোগের প্রয়োজন ও নেই।

ইরি হঠাৎ করেই বিছানায় উঠে বসল! কতক্ষণ সে ঘুমিয়েছে বুঝতে পারছেনা। শুধু তাই নয় এই উঠে বসাটা বাস্তব নাকি স্বপ্নের মধ্যে তাও সে নির্ধারণ করতে পারছেনা।

এই মুহূর্তে ঠিক তার সম্মূখে একটি চেয়ারে একজন সুপুরুষ বসে আছেন, দেখলেই উনাকে যে কেউ রাজপুত্র বলতে দ্বিধা করবেনা, তবে উনার মুখ গম্ভীর হয়ে আছে, মুখ গম্ভীর হলেও ঠোঁটে হালকা হাঁসি ফুটে রয়েছে। হাসিটা ভালভাবে লক্ষ্য না করলে বুঝা যাচ্ছেনা। ভালভাবে লক্ষ্য করতে গেলেই উনার গম্ভীরতার জন্য উনাকে ভয় আর শ্রদ্ধা করতে হবে, কারণ এরকম মুখের ভাবের জন্য যে কেউ এই বিশেষণে বিশেষিত হবে। আবার উনার হাঁসির জন্য উনাকে ভালবাসতে ইচ্ছা করে, কেননা এরকম হাঁসি সবাই ফুটিয়ে তুলতে পারেনা। লোকটার চোখ দেখে মনে হচ্ছে অসম্ভব প্রশান্তি নেমে এসেছে চোখে, সেই প্রশান্তির কারণ হল ইরি।

ইরিকে দেখেই তিনি যেন মুগ্ধ হয়ে গেছেন, আর সেটা প্রকাশ করছেন চোখ দিয়ে। সত্যিই অদ্ভূদ ভাললাগা সেই চাহনি।
ইরি চিন্তা করতে লাগল একই মুখের মধ্যে এত ভাব তিনি কিভাবে ফুটিয়ে তুললেন? এটা কি অলৌকিক কোন ক্ষমতা? না এটা অলৌকিক কোন ক্ষমতা হতে পারেনা। অন্তত বিজ্ঞান এটা বিশ্বাস করবেনা। কিন্তু মুখের এই ভাবগুলো আমার ছবিতে বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে। তাহলে অদ্ভূদ ক্ষমতা ধারণকারী মুখের ঐ ব্যক্তিটি কে? তিনি কি এই জগতের নাকি কোন কল্পনার জগতের? বিজ্ঞানতো আবার বহু জগতের কথা বলছে, প্যারালাল ইউনিভার্স, কোয়ান্টাম মেকানিক্স বা তরঙ্গ বল বিজ্ঞান এই প্যারালাল ইউনিভার্সের ব্যাখ্যা দিচ্ছে। কোয়ান্টাম মেকানিক্স বলছে এই জগতের পাশাপাশি ইনফিনিটি প্যারালাল জগৎ রয়েছে। যেগুলো একই সাথে প্রবাহমান। তাহলে কি আমি ইনফিনিটি প্যারালাল জগতের কোন একটিতে ঢুকে গেছি ?

ইরির সম্মূখে বসে থাকা রাজপুত্রের মত লোকটি ইরিকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করলেন-
* তুমি কী ভাছ? তার প্রশ্ন করার ধরণ দেখে মনে হল তিনি ইরিকে অনেকদিন ধরে চেনেন। প্রশ্ন করার মধ্যে কোন জড়তা বা সংকোচ নেই।
ইরি প্রথমে ব্যাপারটা বুঝতে পারেনি, স্বপ্নের মধ্যে এরকম কেউ তাকে প্রশ্ন করবে। তাহলে কি এটা স্বপ্ন নয়? এটা কি বাস্তব? এই ঘটনাটা বাস্তব মনে হচ্ছে। বাস্তব মনে হওয়ার কয়েকবটি কারণ রয়েছে। যেমন- উনি নীল রঙের শার্ট এবং কাল রঙের প্যান্ট পড়েছেন। স্বপ্নের মধ্যেতো রং চেনার কথা না, উনি খুব সুন্দর করে চুল ঠিক করে রেখেছেন, সেই চুল থেকে ভেসে আসছে অদ্ভূদ ভাল লাগা এক ঘ্রাণ, অবশ্য এই ঘ্রাণ কাপড় থেকেও আসতে পারে। স্বপ্নের মধ্যেতো ঘ্রাণ পাওয়ার কথা না। হাতগুলো আশ্চজনকভাবে নাড়ছেন, পা দেখা যাচ্ছেনা। উনার বসার ভঙ্গিটা দেখে মনে হচ্ছে পরম সুখেই বসেছেন।
ইরির আরো কয়েক মুহূর্ত কাটল, তারপর আচ্ছন্নের মত শান্ত গলায় উত্তর দিল- আমি কী ভাবছি ঠিক বুঝতে পারছিনা।
আমরা কোন মানুষ বা প্রাণীর চিন্তা জগতে ঢুকতে পারি না। আসলে ঢুকতে পারিনা বললে ভুল হবে, আমরা ঢুকার চেষ্ঠা করিনা, কারন সেটা তার একান্ত নিজস্ব, তার এই নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা গুলো কেন জানর? তাই আমরা এড়িয়ে যাই। তবে যে কোন প্রাণীর বাস্তব জগতে আমরা সহজেই ঢুকে পড়ি। এতে কোন বাধাধরা নিয়ম নেই, যেমন- এই মুহূর্তে তোমার জগতে ঢুকে তোমার সামনে বসে আছি। কিন্তু তোমার চিন্তা জগতে ঢুকিনি।

ইরি এবার আমতা আমতা করে প্রশ্ন করল- আপনি কে? কোথা থেকে এসেছেন?
* আমি একজন অব্‌জারভার।
* অব্‌জারভার?
* হ্যা অব্‌জারভার।
* তা আপনি এখানে এসেছেন কেন?
* এইতো অব্‌জার্ভ করতে।
* এখানে কী অব্‌জার্ভ করতে এসেছেন?
* তোমাদের ।
* আমাদের ?
* হ্যা তোমাদের। আমাদের একেকজন অব্‌জারভারের উপর একেকটা জগৎ অবজার্ভ করার দায়িত্ব। তবে সেই অব্‌জারভেশনটা একই সময়ে সকল প্রাণীর উপর হতে হবে।
* আপনার কথা ঠিক বুঝলামনা।
* না বুঝারই কথা। কারন একই সময়ে সকল প্রাণীর উপর কিভাবে অবজার্ভ করা যাবে? এই প্রশ্নটা তোমার মনে এসেছে তাইতো?
* জ্বী তাই।
* আমাদেরকে তাই-ই করতে হয়। একই সময়ে সবাইকে একসাথে অবজার্ভ করতে হয়। তোমাদের পৃথিবীতে একজন বিজ্ঞানী প্রমাণ করে গেছেন যে- গতিশীল কোন কণার অবস্থান জানা গেলে তার ভরবেগ জানা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। আবার ভরবেগ জানা গেলে অবস্থান জানা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। একে হাইজেন বার্গের অনিশ্চয়তার নীতি বলে। কিন্তু আমাদেরকে এই অনিশ্চয়তার নীতি মেনে চললে হবে না। আমাদেরকে দুটোই জানতে হবে এবং তা একই সময়ে। মনে কর একটি পরমাণুর ভেতর ইলেকট্রন, নিউট্রন এবং প্রোটন রয়েছে। একজন অবজারভারের কাজ হল একই সময়ে প্রত্যেকটি গতিশীল কণিকার অবস্থান এবং ভরবেগ জানা। কিন্তু পৃথিবীর কোন পর্যবেক্ষকের দ্বারা এটি সম্ভব নয়।
* এটা কিভাবে সম্ভব হবে?
* ঐ যে বললাম এটা তোমাদের দ্বারা সম্ভব নাও হতে পারে। আমাদের দ্বারা সম্ভব। আমাদেরকে এটি করতেই হয়। আর এভাবেই আমরা যে কোন জগতের সকল প্রাণীকে একসাথে একই সময়ে অব্‌জার্ভ করতে পারি। আমাদের সকল অব্‌জারভারকে আবার অন্য একজন অব্‌জারভার সর্বক্ষণ অব্‌জার্ভ করেন। সেই অন্য একজনটা কে তা আমরা কেউ জানিনা। জানার চেষ্ঠাও করিনা, কারন যিনি আমাদের মত ক্ষমতাশীল অব্‌জারভারদের অব্‌জার্ভ করেন তিনি নিশ্চই আরো ক্ষমতাশীল। চরম ক্ষমতাশীল।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী গল্পটা একটানে পড়তে কেমন যেন অগোছালো লেগেছিল, সামনে আরও ভালো ভালো গল্প পাবো আশা করেছি....

০৮ অক্টোবর - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪